প্রকাশিত: Tue, Feb 7, 2023 4:28 PM
আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 1:12 PM

আদর্শ-গার্ডিয়ান ইস্যুটা কি শুধুই প্রকাশনা-সংক্রান্ত ইস্যু?

রাখাল রাহা : শুরুতেই খুব স্পষ্ট করে বলে নেওয়া দরকার যে, আদর্শ-গার্ডিয়ান ইস্যুটা শুধুই দুটো প্রকাশনী বা তার প্রকাশনা-সংক্রান্ত ইস্যু নয়, কিংবা নয় বইমেলায় তাদের ষ্টল পাওয়া বা না-পাওয়ার ইস্যু। বলা যায়, এদেশের ডমিন্যান্ট চিন্তাচর্চার যেই ধারাটা তার ষাট দশকীয় চরম বিকাশ এবং সেটার রাজনৈতিক অর্জন একাত্তর ধারণ করে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে, তা ২০১৩ পরবর্তী সময়ে এসে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর নানা ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। এরপর থেকে বস্তুত এই ধারার আর কোনো সম্পদ নেই। সেটাই শুধু নয়, বস্তুত সম্পদ সৃজনের সামর্থ্যটাও তার ভিতর থেকে নেই হয়ে গেছে। শুধু চর্বিতচর্বন আর অর্থহীন একধরনের কারিগরি কৌশল-দক্ষতার বিকৃত প্রদর্শন ছাড়া তার আর হাজির করার মতো কিছু নেই। তাই সেসব বিকৃতিকেই নানা উপলক্ষ্যে-অনাপলক্ষ্যে মহান করে নিয়ত অতি ফায়দা লাভ করেও এর অন্তঃসারশূন্যতাকে ভিতর থেকে বুঝে সে এখন নিস্প্রভ আর অবসন্নতায় ভোগে।

এ পর্যায়ে যা ছিল তার রাজনৈতিক অর্জন এই শহীদ মিনার, ওই স্মৃতিসৌধ, সেই বিজয়, স্বাধীনতা, বৈশাখ, বইমেলা এর যা স্পিরিট, সকলই অর্থহীন মেকি এক তাৎপর্য নিয়ে তার কাছে হাজির হয়। তবু সে আয়নায় নিজেকে দেখে না, দেখে বেঢপ পেটফোলা মৃত মৃত সব তাৎপর্যহীন স্পিরিট সামনে পড়ে আছে। কিন্তু এগুলো থেকে সে মুখ ফেরাতে পারে না, কারণ এগুলোই সে। তাই মেকি কারিকুরি আর কৌশল করে করে সে এগুলোর মাঝে নিজেকেই প্রতিবার মহান মর্যাদায় তোলার মিথ্যে আর কিম্ভুুত কসরত করে চলে। এ যে মিথ্যে, আর তা যে কসরত এটা তাকে ভিতর থেকেও নিয়ত শূন্য করতে থাকে। যেই মেকি কারিকুরি আর কৌশুলে বাতাবরণে বেঢপ সৃজনমনন, তাতে তার নিজের অন্তঃকরণই জাগে না, মানুষ তা কেন কিনবে-খাবে-মাখবে? কিন্তু মানুষ স্বেচ্ছায় না কিনলে, না খেলে, না মাখলেও সে রাষ্ট্র, সরকার আর প্রতিষ্ঠানকে গছানোর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে মানুষের পকেট কেটে মানুষেরই মাথায় সেই আবর্জনা ফেলে চলে। মাঝ থেকে ঐতিহাসিকভাবে জেগে ওঠে চিন্তার আরেক স্রোত। সেই স্রোত এখন দৃশ্যমান। 

বেশ কয়েক বছর থেকেই মেলায় এটা দেখা যাচ্ছিল, এবার আরও স্পষ্ট হলো। (ব্যক্তিগতভাবে আমি বিগত কয়েক বছর ধরে অনেককে বলেছি, একটু একটু লিখেছিও যে, এদের কাছে এই বইমেলা শীঘ্রই আর ভালো লাগবে না। কারণ তারা হতাশার সঙ্গে দেখবে তারা যার ঢোল পেটায় তা কেউ কেনে না। এবং যেখানে পাঠকের আগ্রহ তাকে সে গ্রহণ করতে পারছে না। তখন তারা বলবে বইমেলা নষ্ট হয়ে গেছে, ওটা বন্ধ হয়ে গেলেই ভালো) বস্তুত ঐতিহাসিক-সামাজিক-রাজনীতিক ভিত্তিসমৃদ্ধ একটা বুদ্ধিবৃত্তিক গোষ্ঠীর ধারাবাহিক যে পচন আর পতন, এবং সেই পচন-পতনের ধারাবাহিকতায় অনিবার্যভাবে আরেকটা ঐতিহাসিক-সামাজিক-রাজনীতিক ভিত্তিসমৃদ্ধ গোষ্ঠীর যে ধারাবাহিক জাগরণ তার থেকে পূর্বতনের রক্ষারই শেষ নোংরা চেষ্টা চলছে এখন।

ষাট দশকের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জাগরণ যে-গোষ্ঠীর ছিল মূল বুদ্ধিবৃত্তিক আশ্রয়, আর যার সমন্বিত-সম্মিলিত অর্জন ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্র, সেই রাষ্ট্রের সামষ্টিক পচন-পতনকালে এর বোনফায়ার শীৎকারের মূলধনিতে শরীকও সেই একই গোষ্ঠী। কিছু শব্দ, মুখোশ আর কারিগরী চাকচিক্য ছাড়া বর্তমানে তাদের চিন্তার ন্যূনতম ধার আর লেভেলটুকুও অবশিষ্ট নাই। চিন্তার এ হেন দৈন্য আর তার চেয়েও দীনহীন পতিত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ও অস্ত্রশস্ত্রে ভর করে বুদ্ধির রেসে জয়ী হওয়া যায় না। একাত্তর তার চরম উদাহরণ। নতুন উদাহরণ সৃষ্টির অপেক্ষায়। [দ্বিতীয় খসড়া নোট]। ফেসবুক থেকে